খুলনা, বাংলাদেশ | ২৪শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ৭ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

Breaking News

  প‌বিত্র ঈদুল আজহা আজ, খুলনা গেজেটের সকল পাঠক, লেখক, বিজ্ঞাপনদাতা ও শুভানুধ্যায়ীকে শুভেচ্ছা, ঈদ মোবারক।

চট্টগ্রাম বন্দর নয়, বিদেশিদের দেওয়া হচ্ছে ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব: প্রধান উপদেষ্টা

গেজেট ডেস্ক

চট্টগ্রাম বন্দরকে বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার অভিযোগ ও সমালোচনা নাকচ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, যাদের বন্দর ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে, তাদের মাধ্যমে বাংলাদেশ বহুমাত্রিক উপকার পাবে। এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যতে বাংলাদেশিরাই বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন বন্দর পরিচালনায় সক্ষম হবেন।

ঈদুল আজহা উপলক্ষে শুক্রবার (৬ জুন) সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা এমন অভিমত ব্যক্ত করেন। তবে বন্দর পরিচালনার দায়িত্ব কাদের দেয়া হচ্ছে সেই দেশের নাম তিনি উল্লেখ করেননি। বরং বন্দর নিয়ে যারা অপ্রচার করছে তাদের প্রতিহত করার আহ্বান জানান।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর অর্থনৈতিকভাবে আমাদের যে উন্নতির শিখরে থাকার কথা ছিল, বিশ্বের কাছে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার কথা ছিল সে উচ্চতায় আমরা পৌঁছাতে পারিনি। আমরা চাই, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক প্রাণকেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হোক। এ কারণে বিনিয়োগ পরিষেবার উন্নয়নের পাশাপাশি বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে উদ্যোগ নিয়েছি। এটা করা সম্ভব না হলে দেশের কোটি কোটি মানুষের বেকারত্ব ঘুচবে না। অর্থনৈতিক সংকট রয়েই যাবে।

চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে অনেকের মধ্যে কৌতূহল তৈরি হয়েছে ‍উল্লেখ করে তিনি বলেন, মাঝেমাঝে এমন কথাও শুনেছি যে এ বন্দর বিদেশিদেরকে নাকি দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমি আগেও জানিয়েছি, চট্টগ্রাম বন্দর হলো বাংলাদেশের অর্থনীতির হৃৎপিণ্ড। বর্তমানে এই হৃৎপিণ্ড অতি দুর্বল। এখন যে অবস্থায় আছে সে অবস্থায় তাকে রেখে দিলে আমাদের অর্থনীতিকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না। এই হৃদপিণ্ডকে বড় করতে হবে। মজবুত করতে হবে। সুঠাম করতে হবে। তা করতে হলে বহু উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। অভিজ্ঞদের সাহায্য লাগবে। আমরা যাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি তারা বন্দর ব্যবস্থাপনায় বিশ্বের সেরা, সবচেয়ে অভিজ্ঞ। তারা ইউরোপ, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত, পাকিস্তান, তুরস্ক, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকাসহ বিশ্বজুড়ে বন্দর পরিচালনা করে।

তিনি বলেন, তাদের কাজ বন্দর ব্যবস্থাপনা করা, আমাদের লক্ষ্য হলো বন্দর ব্যবস্থাপনার কাজ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাদের কাছ থেকে শিখে নেওয়া। আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি, যদি ৩১ সালের মধ্যে আমরা বন্দরের কাজ শিখে ফেলি এর পরবর্তী ৫ বছরে অর্থাৎ ৩৬ সালের মধ্যে পৃথিবীর যত দেশে যত বন্দর এই কোম্পানিগুলো চালায় তাদের বহু বন্দর এই বাংলাদেশিরাই পরিচালনা করবে। আপনারা যে বন্দরেই পা দেবেন, দেখবেন সেখানে বাংলাদেশিরা আছেন। বহু লোকের কর্মসংস্থান হবে। বহু লোকের ওপরে ওঠার সুযোগ হবে। তাদের নিজেদের প্রয়োজনেই তারা আমাদের চাকরি দেবে।

‘আগে যেকোনো জাহাজে চড়লে দেখতাম জাহাজের নাবিক চট্টগ্রামের কিংবা সিলেটের। বন্দরের কাজ একবার শিখে নিতে পারলে ভবিষ্যতে আমরা যে বন্দরে যাব না কেন দেখব সেখানে চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, সিলেট আর বরিশালের লোক। বাংলাদেশের লোক, বলেন তিনি।

ড. ইউনূস বলেন, ‘আমাদের বন্দর যদি আধুনিক হয়, তা শুধু বাংলাদেশের অর্থনীতিতেই ভূমিকা রাখবে না, বরং আমরা নেপাল, ভূটানসহ পাশ্ববর্তী সকল দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবো। এই বন্দরই হবে এই অঞ্চলের অর্থনীতির সমৃদ্ধির চাবিকাঠি।’

তিনি বলেন, কুমিরা থেকে টেকনাফ পর্যন্ত নানা বন্দরের কর্মচাঞ্চল্যে সমগ্র উপকূল অঞ্চল দক্ষিণ এশিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক প্রাণকেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে। এই পুরো অঞ্চলে অনেকগুলো শিল্পাঞ্চল গড়ে উঠবে শুধু সমুদ্রের সান্নিধ্য এবং তার ব্যবহারের দক্ষতার কারণে। তার সঙ্গে গড়ে উঠবে আরেকটি নতুন শিল্প। আধুনিক পদ্ধতিতে সমুদ্রে মাছ পালন, আহরণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের শিল্প। এটি আরেকটি নতুন জগত সৃষ্টি করবে। এ ব্যাপারে আমরা আমাদের বন্ধু দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছি এবং তারা উৎসাহ সহকারে সাড়া দিয়েছেন।’

বন্দর ব্যবস্থাপনার জন্য আমরা যাদেরকে আনছি তারা পৃথিবীর যে-সব দেশে কাজ করে সেসব কোনো দেশেরই সার্বভৌমত্ব, জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানাই আপনারা নিজেদেরকে ভিত্তিহীন বিরোধিতা এবং অপপ্রচারের শিকার হতে দেবেন না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বন্দর ব্যবস্থাপনার উদ্যোগে আপনাদের দৃঢ় সমর্থন অব্যাহত রাখুন। যারা বিরোধিতা করছে তাদের প্রতিহত করুন।’

খুলনা গেজেট/এএজে




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!